কম বয়সী নারী বিলিয়নিয়ার
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
ফেসবুকের ৭ নির্বাহী কর্মকর্তার একজন শেরিল স্যান্ডবার্গ, ফেসবুকের প্রথম নারী নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ফেসবুকের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি। কর্মজীবনে তিনি বিশ্ব ব্যাংক, গুগলেও চাকরি করেন। শুধু তাই নয় প্রভাবশালী ‘টাইম সাময়িকীর’ দৃষ্টিতে বিশ্বের প্রভাবশালী ৫০ নারীর মধ্যে তিনি একজন। বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সে বিলিয়নিয়ারদের মধ্যে অন্যতম।
শেরিল স্যান্ডবার্গ ১৯৬৯ সালের ২৮ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে জন্মগ্রহণ করেন। তার আরও এক ভাই ও বোন রয়েছেন। ভাইয়ের নাম ডেবিড এবং বোনের নাম মিচেল। তার বয়স যখন ২ বছর তখন তার বাবা-মা নর্থ মিয়ামি বীচ থেকে ওয়াশিংটনে চলে আসেন।
তিনি ২৫ বছর বয়সে বিশ্বের খ্যাতনামা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নেন। ১৯৯৩ সালে ব্রেইন ক্রাফ এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। তার পরের বছর ১৯৯৪ সালে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। ২০০৪ সালে ডেভিড গোল্ডবার্গকে বিয়ে করেন তিনি।
পারিবারিক জীবনে তিনি এক ছেলে এবং এক মেয়ে সন্তানের মা। তাদের ঘিরে শেরিলের অন্তহীন স্বপ্ন। শেরিলের প্রত্যাশা তার ছেলে এবং মেয়ে দু’জনেই তাদের পরিবারে এবং বাইরে সমান দায়িত্ব পালন করবে।
হার্ভার্ড থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে যোগ দেন বিশ্ব ব্যাংকে। তার ২০০৪ সালে যোগ দেন বিশ্বের প্রধান সার্চ ইঞ্জিন ‘গুগল’ এ। তিনি সার্চ ইঞ্জিন গুগলের ‘গ্লোবাল অনলাইন সেলস’ এর ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। গুগলে চাকরি নেয়ার আগে স্যান্ডবার্গ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রীর চীফ অব স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন।
৪ বছর সেখানে চাকরি করার পর ২০০৮ সালে যোগ ফেসবুকে। স্বয়ং মার্ক জুকারবার্গই তাকে গুগল থেকে ফেসবুকে নিয়ে আসেন। ওই বছর ‘ওম্যান ইন টেকনোলজি, ইন্টারন্যাশনাল’ বিশ্বপ্রযুক্তিতে শীর্ষ ১০ ক্ষমতাবান নারীর তালিকায় চলে আসেন তিনি। ফেসবুকের চিফ অপারেটিং অফিসার পদে দায়িত্ব পালনে শেরিল স্যান্ডবার্গ বিপণন, বিকিকিনি, লোকসম্পদ, লোকনীতি এবং যোগাযোগের বিষয়গুলো সরাসরি তত্ত্বাবধান করেন।
নিত্যদিনই ফেসবুকে অনলাইনে সার্চ ইঞ্জিন ক্রয়-বিক্রয়ে নিত্যনতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে অবদান রেখে চলেছেন এ নারী প্রযুক্তিবিদ। প্রতিষ্ঠানের তথ্যানুযায়ী ২০১১ সালে তিনি সবচেয়ে বেশি বেতনের কর্মকর্তার মর্যাদা পান। ২০১২ সালের জুনে তিনি ফেসবুক কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের একজন প্রভাবশালী সদস্য নির্বাচিত হন। ফেসবুক ছাড়াও তিনি ওয়াল্ট ডিজনি ও উইমেন ইন্টারন্যাশনালের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য।
বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী বিলিয়নিয়ার:
ব্লুমবার্গ এর এক প্রতিবেদনে শেরিল স্যান্ডবার্গকে বিশ্বের অন্যতম কম বয়সী বিলিয়নেয়ার হিসেবে উল্লেখ করেন। তাঁর সম্পদের পরিমাণ এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার অতিক্রম করেছে। শেরিলের এ ধনী হওয়ার পেছনে রয়েছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের শেয়ার। জানা গেছে শেরিলের প্রায় এক কোটি ২৩ লাখ ফেসবুক শেয়ার রয়েছে। সম্প্রতি এ শেয়ারগুলোর মূল্য বৃদ্ধিই তাঁর অর্থবিত্তের কারণ। ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স ইনডেস্ক ইতিমধ্যেই ৪৪ বছর বয়সী শেরিলকে বিশ্বের অন্যতম তরুণ বিলিয়নেয়ার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ২০১৪ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন আরেক প্রতিবেদনে তাকেই বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী বিলিয়নিয়ার নারী হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া:
২০১৩ সালের জুলাই মাসে ঘটে এ ঘটনাটি। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো বিমানবন্দরে অবতরণের সময় এশিয়ানা এয়ারলাইন্সের যে বোয়িং-৭৭৭ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে সেই বিমানে তার যাত্রা করার কথা ছিল। দুর্ঘটনার কথা জানতে পেরে তিনি ফেসবুকে বলেন, “ধন্যবাদ দেয়ার জন্য মিনিট খানেক সময় ব্যয় করছি। আমার পরিবার, সহকর্মী ডেভিড ফ্রস্ট, কার্লটন ঘোলসন, এবং কেলি হফম্যান সহ আমার এই দুর্ঘটনা কবলিত এশিয়ানার বিমানে ভ্রমণ করার কথা ছিল। আমার পরিবারের টিকিট যেন এয়ার মাইল ব্যবহার করে কেনা যায় সেজন্য আমরা এশিয়ানার বদলে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স গ্রহণ করি। এশিয়ানার সাথেই আমাদের অবতরণ করার কথা থাকলেও তা আগেই পৌঁছে যায় এবং দুর্ঘটনার ২০ মিনিট আগে আমাদের বিমান অবতরণ করে।”
শেয়ার বিক্রি:
নিজের নামে থাকা ৯ কোটি ১০ লাখ ডলারের শেয়ার বিক্রি করেছেন শেরিল স্যান্ডবার্গ। মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) এ তথ্য প্রকাশ করে। এ পরিমাণ শেয়ার বিক্রির পরও স্যান্ডবার্গের শেয়ার এবং অন্যান্য সম্পদের মোট পরিমাণ ১০০ কোটি ডলারের বেশি।
তার নেতৃত্বে কোম্পানিটির বাজার মূল্য ৯ হাজার ৩০০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে এর মোট কর্মীর সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ফেসবুকের শত কোটি ডলার মুনাফা অর্জনের পেছনে যাদের অবদান রয়েছে, তার মধ্যে স্যান্ডবার্গ অন্যতম। সম্প্রতি কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্য প্রথমবারের মতো ৩৮ ডলারের ঘর ছাড়ালে স্যান্ডবার্গ তার উল্লিখিত পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করে দেন।
প্রতিক্ষণ/এডি/এনজে